চরে মূলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, কুমড়া, গোল আলু, টমেটো, মরিচ, বেগুন, লালশাক, বরবটি, সিম, করলা, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গাসহ আরও অনেক রকমের সবজি চাষ হয়।
উৎপাদিত সবজি জেলা শহর, উপজেলা সদরসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলার হাট-বাজারেও বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এসব বাজারে সবজির চাহিদা থাকায় দামও পাওয়া যায় বেশ।
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে উৎপত্তি হওয়া গোমতী নদী কুমিল্লা শহরের পাশ ঘেঁষে প্রবাহিত হয়ে পড়েছে মেঘনা নদীতে। প্রায় ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীটি জেলা সদর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, দেবীদ্বার, মুরাদনগর, তিতাস, হোমনা ও দাউদকান্দি উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। এ উপজেলাগুলোর বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রবাহিত নদীটির চরে রয়েছে প্রায় ২ হাজার হেক্টর চাষ যোগ্য জমি। এসব জমি ধান ছাড়াও ফলে নানা প্রকারের শাক-সবজি।
মুনাফা ভালো হওয়ায় চাষীরা নিজের জমি ছাড়াও অন্যের জমি পত্তন ও বর্গা নিয়ে সবজি চাষ করে থাকেন। এ এলাকায় ক্রান্তিক চাষিসহ প্রায় ৫ হাজার লোক এর সাথে জড়িত।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চাষিরা তাদের খেতে শাক-সবজির পরিচর্যা করছেন। কেউ ফসল তুলছেন। শাক-সবজির বিস্তৃত সবুজের মধ্যে কৃষকের মুখে লেগে আছে প্রাপ্তির পরম হাসি।
গোমতীর বাঁধ এলাকার জালুয়াপাড়া গ্রামের সবজি চাষি মোশারফ হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি এবার ১ একর জমিতে মূলা চাষ করেছেন। তার ব্যয় হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। জমিতে ফলানো সব মূলা এরইমধ্যে প্রতি হালি ৩০ টাকা দরে বিক্রি করে ফেলেছেন। উৎপাদনের খরচ বাদ দিয়ে ৫০ হাজার টাকা মুনাফা করেছেন। মূলার পর ওই খেতেই আবার বাঁধাকপির চারা লাগিয়েছেন। এছাড়াও আরও ১০ শতক জমিতে বাঁধাকপি লাগিয়েছেন। যা কিছু দিনের মধ্যেই বিক্রি করার উপযোগী হবে। আবহাওয়া ঠিক থাকলে ও পোকামাকড় আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করতে পারলে লাভের মুখ দেখবেন বলেই আশা করেন তিনি।
একই গ্রামের কৃষক মিজান মিয়া মূলা ও ফুলকপি চাষ করেছেন। ফসল ভালই হয়েছে। এগুলো বিক্রি করে একই খেতে আবার করলা, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, চাল কুমড়ার চারা লাগাবেন। তিনি মূলা ও ফুলকপির ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন।
আরেক শাক-সবজি চাষি মনজিল মিয়া এবার লালশাক, মূলা, ফুলকপি, বরবটি চাষ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে।
গোমতী নদীর চরে সবজির চাষাবাদে পানি সেচ দেয়া হয় নদী থেকেই। অল্প খরচে সেচ সুবিধা থাকায় উৎপাদন খরচও কম পড়ে বলে জানান মাঝীগাছা গ্রামের চাষি মন্টু মিয়া। অতিবৃষ্টি, বন্যা ও রোগ-বালাই না হলে ফসল ভালই হয় বলে তিনি জানান।
চরে সবজি চাষিদের অনেকেই বীজতলা করে চারা উৎপাদন করেন। নিজের জমিতে রোপন করে বাড়তি চারা অন্যদের কাছে বিক্রি করেন। চারা উৎপাদনে কিছু টাকা বাড়তি আয় হয়। সে টাকা দিয়ে ফসল উৎপাদনে ব্যয় করেন বলে জানালেন রন্তাবতী গ্রামের চাষি ইমন মিয়া।
সবজি চাষের ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক সুরঞ্জিত চন্দ্র বলেন, কুমিল্লার গোমতী নদীর চরের মাটি শাক-সবজি চাষের জন্য উর্বর। নদী পাশে থাকায় সেচের পানির অভাব হয় না। এই চরকে সবজি চাষের আদর্শ স্থান বলা যেতে পারে।
বছরে তিন ফসল উৎপাদন হয় এই চরে। এমনিতেই কৃষকরা সবজি চাষে দক্ষ। তবুও কৃষি বিভাগ থেকে তাদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করা গেলে তারা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি ভোক্তার চাহিদাও মিটবে, বলেন এ কর্মকর্তা।